চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম এ অধ্যয়নকালেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন অজিত চন্দ্র আইচ। পেশাগত জীবনের সূচনা ১৯৮৫ সালের ২০ মে জীবন বীমা কর্পোরেশনের চট্টগ্রামস্থ ৭১৭ ব্র্যাঞ্চে উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে । ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে দেশের প্রথম বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে যোগ দেন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে।
তৎকালীন বীমা ব্যক্তিত্ব এন.এইচ. সিদ্দিকী ও এ.টি.এম জাফর উল্লাহ চৌধুরীর সরাসরি সান্নিধ্যে থেকে বীমা পেশাকে ভালবেসে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সারাদেশব্যাপী সংগঠন সৃষ্টি করে পর পর তিনবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।
১৯৯৩ সনের মে মাসে ন্যাশনাল লাইফ ছেড়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক পার্লামেন্ট্রিয়ান এম মকবুল হোসেনের হাত ধরে সন্ধানী লাইফে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ২০ বছর সারাদেশ তৃণমূল পর্যায়ে, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে সংগঠক ও কর্মী সৃষ্টির মাধ্যামে সন্ধানী লাইফকে একটি বটবৃক্ষে রূপান্তর করেন। আজ প্রথম সারির পাঁচটি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে সন্ধানী লাইফ অন্যতম একটি। কোম্পানির ৮০ ভাগ সংগঠক তার হাতে তৈরি এবং স্বমহিমায় আজও প্রতিষ্ঠিত আছেন।
২০১৩ সালে চতুর্থ প্রজন্মের লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সোনালী লাইফে প্রতিষ্ঠাতা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন অজিত চন্দ্র আইচ। দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএ’র সাবেক সফল প্রেসিডেন্ট মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সার্বিক সহযোগিতা ও নির্দেশনায় মি: অজিত বীমা শিল্পের এক অন্যন্য কোম্পানি সোনালী লাইফকে গড়ে তোলেন। শতভাগ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সোনালী লাইফ গ্রাহকসেবায় যুগান্তকারী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। জীবন বীমা শিল্পে এক অনুকরণীয় নাম হয়ে ওঠে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজও দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে সফল এই কোম্পানি।

২০২০ সালের পহেলা জুলাই অজিত চন্দ্র আইচকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন প্রোগ্রেসিভ লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড বিপর্যয়ের ওই বছরে তেমন কোন কার্যক্রম করা সম্ভব হয়নি। ২০২১ ও ২০২২ সনে প্রোগ্রেসিভ লাইফের ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে মোটিভেশনের মাধ্যমে জাগিয়ে তোলেন, এনালগ পদ্ধতির গ্রাহক সার্ভিস থেকে আইএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিজিটাল গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করেন। অতিরিক্ত ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে দুর্বল অফিস বন্ধ, অতিরিক্ত স্টাফ অব্যাহতি, সিনিয়র সংগঠকদের বিভিন্ন অঞ্চলে পদায়নসহ উল্লেখ্যযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন অজিত চন্দ্র আইচ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো হাজার হাজার গ্রাহকের অনাদায়ী বীমা, ২০১৮ সাল থেকে বকেয়া বীমা দাবি পরিচালনা পর্ষদকে অনুরোধ জানিয়ে ২০২১ এবং ২০২২ সালে প্রায় ১০৪ কোটি বীমা দাবি পরিশোধ করেন। ভঙ্গুর সংগঠনকে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার সক্রিয় কর্মী গড়ে তোলেন। এখনও অনেক বীমা দাবি নতুনভাবে বকেয়া হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জিং কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন কোম্পানির সেক্রেটারি ও মার্কেটিং প্রধান ও ডিএমডি মোঃ জহির উদ্দীন।
বীমা শিল্পের এই জীবন্ত কিংবদন্তি পারিবারিক জীবনেও অত্যন্ত সফল পিতা। তার মেয়ে ডাঃ অনিন্দিতা আইচ, জামাতা ডাঃ শুভ বিশ্বাস অস্ট্রেলিয়ার টাউনসভিল হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ছেলে মের্লবোন অস্ট্রেলিয়ার প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত।
জীবন বীমা শিল্পের অনন্য এই কর্মবীর অজিত চন্দ্র আইচ চলতি বছরের ৩০ জুন প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী পদে তিন বছরের চুক্তির মেয়াদপূর্তির তিন মাস আগেই বিধি মোতাবেক পদত্যাগ পত্র জমা দেন। ১৮ই জুন প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় গ্রহণ করেন অজিত চন্দ্র আইচ। এভাবেই জীবন বীমা শিল্পে ৩৮ বছরের বর্ণাঢ্য সফল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানেন তিনি।
আবারো নতুন কোন কোম্পানিতে ক্যারিয়ার শুরু করবেন কি না জানতে চাইলে অজিত চন্দ্র আইচ বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে হয়তো নতুন কোন কোম্পানিতে যোগদান করবেন তিনি।










